কাঠগোলাপ

কাঠগোলাপ এ নাম ছাড়াও গুলাচ, কাঠচাঁপা, গোলকচাঁপা, গৌরচাঁপা, চালতা গোলাপ
ইত্যাদি নামে একে ডাকা হয়। কাঠগোলাপের প্রজাতি বহু ও বিচিত্র। সুদূর গুয়াতেমালা, মেক্সিকো থেকে এসে এটি ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের উদ্যানে। দেশের নানা প্রান্তেও এর দেখা মেলে। ঢাকায় সুপরিকল্পিত বীথি না থাকলেও বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে চোখে পড়ে এর বর্ণিল প্রস্ফুটন। জাতীয় জাদুঘর, বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ব্রিটিশ কাউন্সিল, শিশু একাডেমীর বাগান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কাঠগোলাপ গাছ দেখা যায়।
শীতে পাতাহীন বৃক্ষ যেন কোনো কুশলী শিল্পীর হাতে গড়া সুনিপুণ ভাস্কর্য।  শীতের পর বসন্তেও পত্র এবং পুষ্পশূন্য কায়ায় এটি ঘুমিয়ে থাকে। চৈত্রের শেষভাগে শুরু হয় নতুন কুঁড়ির জাগরণ। ফুটতে শুরু করে একটি-দুটি করে ফুল। দেখতে দেখতে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে গোটা গাছ। আর ফুলের এ বাসর রাঙিয়ে হেসে ওঠে সৌম্য সবুজপাতা। ডালের মাথায় থোকা থোকা ফুল যেন মনোলোভা কোনো পুষ্পস্তবক। বিশেষ করে লাল-গোলাপি রঙের ফুলগুলো সবচেয়ে আকর্ষণীয় দেখায়। তরুতলে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত পথিক দৃষ্টি জুড়িয়ে নেন একপলক। সঙ্গে মিষ্টি মধুর ঘ্রাণ উদাস-আকুল করে তোলে পথিকের মন। বাসি ফুলগুলো একসময় ঝরে পড়ে। তখন গাছতলায় ঝরা ফুলের সৌন্দর্যও উপভোগ করার মতো।
কাঠগোলাপ গাছ আকারে মাঝারি, উচ্চতা সাধারণত ১২ থেকে ৩০ ফুট। নরম, ভঙ্গুর শাখা-প্রশাখা ছড়ানো-ছিটানো, দুধকষভরা। পাতা কিছুটা বড় ও লম্বা। পাঁচটি ছড়ানো পাপড়ির ফুলগুলো পাঁচ থেকে আট ইঞ্চি চওড়া। পাপড়ির কেন্দ্রে কিছুটা হলদে বা কমলা রঙের ছোঁয়া থাকে। ফুলের পাশাপাশি এর পাতার বিন্যাসের সৌন্দর্যও দৃষ্টি কাড়ে। এ গাছের নানা অংশের ঔষধি ব্যবহার রয়েছে। নারকেল তেলের সঙ্গে এর কষ চর্মরোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এর ফুল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্রতার উৎস, পূজার উপকরণ। বৌদ্ধরা ভাবে, এটি মৃত্যুহীন প্রাণের প্রতীক।

তথ্যসুত্রঃ দৈনিক সমকাল, ছবিঃ জোবায়ের রায়হান, পঞ্চগড় থেকে তোলা।