রাজ ঘুঘু বা ধবল ঘুঘু

রাজ ঘুঘু, ছবিঃ জোবায়ের রায়হান
রাজ ঘুঘু, ছবিঃ জোবায়ের রায়হান

রাজ ঘুঘু বাংলাদেশের স্থানীয় প্রজাতি। তিলা ঘুঘুর পরে সবচেয়ে পরিচিত ঘুঘু, গ্রামেগঞ্জে সর্বাধিক বিস্তৃত; বনের পাশেও দেখা যায়; তবে বড় বড় শহর এবং ঘন বন এড়িয়ে চলে। সারা দেহ বালু মেশানো ধুসর রঙের কেবল ব্যতিক্রম হল ঘাড়ের কালো বন্ধনী। ডানার প্রাথমিক পালক কালচে যেমন ঠোঁট; লেজের বাইরের পালকের ডগা সাদা। চোখের তারা টকটকে লাল; পাপড়ির কিনারা লালচে; চোখের চারপাশে পালকহীন চামড়া ধূসরাভ গোলাপি; পা ও পাতা টকটকে লাল। সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় থাকে। সব সময় খায় মাটির উপরে থেকে। স্বভাব অন্যান্য ঘুঘুদের মত; ডাক খুব সুন্দর এবং ছন্দময়। দৈর্ঘ্য ৩২ সে. মি.

একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়। প্রজনন ঋতুতে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। কণ্ঠস্বর মধুর। মাদকতা রয়েছে সুরে। ডাকে ‘ঘু ঘু ঘু’ সুরে। গ্রীষ্মের অলস দুপুরে দূর থেকে ভেসে আসা ওদের ডাক বড় মধুর লাগে। নিজ প্রজাতির বাইরেও অন্য প্রজাতির ঘুঘুদের সঙ্গেও এরা ঘুরে বেড়ায়। তিলা ঘুঘুদের সঙ্গে দলবেঁধে এদের মাঠ-প্রান্তরে চরে বেড়াতে দেখা যায়। বিশেষ করে ঘাসে ভরা জমিতে এটা-সেটা কুড়িয়ে খায়।

রাজ ঘুঘু লম্বায় ৩০ সেন্টিমিটার। ঘাড়ে অর্ধচন্দ্র কালো রেখা। দেহের উপরি ভাগ ধূসর বর্ণের। ডানার পালক কালচে। বুক ফিকে নীলচে পাটকিলে। তলপেট ছাই ধূসর। লেজের তলার পালক গাঢ় ধূসর। লেজের বাইরের পালকের ডগা সাদা। চোখের তারা লাল। চোখের বলয় পালকহীন ধূসরাভ-গোলাপি চামড়ায় আবৃত। পা ও পায়ের পাতা উজ্জ্বল লাল। ঠোঁট কালো। স্ত্রী-পরুষ পাখি দেখতে প্রায় একই রকম।

রাজ ঘুঘু, ছবিঃ জোবায়ের রায়হান

এদের প্রধান খাবার শস্যদানা। সরিষার প্রতি আসক্তি রয়েছে। খুটে খুটে মাটি খেতে দেখা যায়। প্রজনন সময় মার্চ থেকে জুন। ঝোপ জঙ্গল ঘেরা গাছের নিচের দিকে শুকনো ঘাস লতা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ১-২টি। স্ত্রী-পুরুষ পালা করে ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৬-১৮ দিন।

তথ্যসুত্রঃ বাংলাদেশের পাখি, রেজা খান,বাংলা একাডেমী। ছবিঃ জোবায়ের রায়হান।