
রাজ ধনেশ বাংলাদেশে বিরল এবং প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের স্থানীয় প্রজাতি। একসময় সম্ভবত সব মিশ্র চিরসবুজ বনেই রাজ ধনেশ বাস করতো। এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের এবং সিলেতের বন বিভাগের গভীর বনে কোথাও দু এক জোড়া চোখে পড়ে কালেভদ্রে। এশিয়ার ও আফ্রিকার উড়ন্ত ধনেশের মধ্যে সবচেয়ে বড়। বিশাল বড় এ পাখির মাথা, গলা, ঘাড়, এবং বুকের উপরের অংশ হলুদ যেমন হলুদ মস্ত বড়, নিচের দিকে বাঁকানো ঠোঁট। উপরের ঠোঁট লালছে, ঠোঁটের বর্ম বড়, চ্যাপ্টা, প্রশস্ত এবং কপালে ঢেকে থাকে ও সামনে পিছে দুটি করে ডগা।
ঠোঁটের গোড়া, কপালের পাশ থেকে গলা ও থুতনি কালো। কালো ডানার কিনারা এবং মাঝ বরাবর আলাদা মোটা পট্টি। সাদা লেজের উপ-ডগায় বড় কালো বলয় আছে। বর্মের আগে পিছে কালো, বুক কালো, পেট, পা, অবসারণী এবং লেজের নিচের ঢাকনা পালক সাদা। চোখের তারা লাল, চোখের চারপাশে চামড়ার বলয় কালো। স্ত্রী পাখির বর্মে কালো রঙ নেই বললেই চলে। চোখের তারা সাদা এবং চারপাশের চামড়া লাল। আমাদের বনে উড়ে বেড়ানো এমন দ্বিতীয় পাখির প্রজাতি নেই।

ধনেশ দারুণভাবে স্থানাপেক্ষিক। একটি জোড়া একই এলাকায় আজীবন থাকে কোন প্রাকৃতিক বা মানুষসৃষ্ট দুর্যোগ না হলে বা বন ধংশ করে না ফেললে। এরা খুব জোরে শব্দ সৃষ্টি করতে পারে এবং ওড়ার সময় ডানা ঝাপটানোর শব্দও হয় বেশ জোরে। বিভিন্ন ফলের সাথে ছোট খাটো জীব-জন্তুও খায়। মরা গাছের উপরের দিকে গর্ত করে বাসা বানায়। কোন কোন গাছে পর পর কয়েকটি গর্ত থাকতে পারে। ডিম পারা থেকে বাচ্চা বড় না হওয়া পর্যন্ত মা পাখি বাসার ভেতরেই থাকে। এ সময় বাবা পাখি এই দীর্ঘ সময় মা ও বাচ্চার খাবার জোগাড় করে।
তথ্যসুত্রঃ রেজা খান (বাংলাদেশের পাখি, বাংলা একাডেমী) ছবিঃ সংগ্রহ