মান্দারিন হাঁস

মান্দারিন হাঁস (Aix galericulata) (ইংরেজি: Mandarin Duck) বা সুন্দরী হাঁস Anatidae (অ্যানাটিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Aix (অ্যাক্স) গণের এক প্রজাতির বাহারি রঙের ছোট ডুবুরি হাঁস। মান্দারিন হাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ টোপরপড়া ডুবুরি সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ১৮ লাখ ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। গত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা কমে গেলেও আশংকাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছায়। বাংলাদেশে এরা পরিযায়ী হয়ে আসে। সমগ্র পৃথিবীতে আনুমানিক ৬৫ হাজার থেকে ৬৬ হাজার মান্দারিন হাঁস রয়েছে।

প্রায় সমগ্র ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু কিছু অঞ্চল পর্যন্ত এদের বিস্তৃতি। স্বভাবে এরা প্রধানত পরিযায়ী। তবে দূর দূর প্রাচ্যের মান্দারিন হাঁস সাধারণত স্থায়ী।

বিগত শতাব্দীতে রাশিয়া আর চীনে ব্যাপক হারে বনাঞ্চল ধ্বংস করা শুরু হলে মান্দারিন হাঁসের সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমতে শুরু করে। পরবর্তীতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উদ্যানের শোভা বর্ধনের জন্য এ হাঁস নেওয়া হয়। এছাড়া এর সৌন্দর্য্যের জন্য বাসাবাড়িতে পোষা শুরু হয়। উপযুক্ত পরিবেশে এরা দ্রুত বংশবিস্তার শুরু করে এবং পরবর্তীতে এদের সংখ্যা সন্তোষজনক অবস্থানে ফিরে আসে। ইউরোপে এরা বেশ ভাল অবস্থায় থাকলেও এশিয়ায় এদের অবস্থা মোটামুটি। সমগ্র এশিয়ায় সম্ভবত ২০ হাজার মান্দারিন হাঁস রয়েছে। এদের এশিয়ায় এখনও টিকে থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে এদের বিদঘুটে স্বাদ। স্বাদ ভালো না হওয়ায় শিকার হওয়ার হাত থেকে এরা অনেকাংশে বেঁচে যায়।

পুরুষ মান্দারিন হাঁস অসাধারণ সুন্দর, রঙ-চঙে এক হাঁস। এদের দৈর্ঘ্য কমবেশি ৪৪ সেন্টিমিটার, ডানা ২২.৫ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২.৮ সেন্টিমিটার, পা ৩.৮ সেন্টিমিটার ও লেজ ১১ সেন্টিমিটার। ওজন ৪২৮ থেকে ৬৯৩ গ্রাম। প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী ও পুরুষ হাঁসের মধ্যে পার্থক্য বিস্তর।

এক জোড়া মান্দারিন
এক জোড়া মান্দারিন

পুরুষ মান্দারিন হাঁসের সারা শরীর জুড়ে নানান রঙের ছড়াছড়ি। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ হাঁসের ডানা কমলা রঙ ধারণ করে, ডানায় নৌকার পালের মত দু’টি খাড়া পালক থাকে। মাথা গোল, মাথার চাঁদি বাদামি, চাঁদির সামনের দিকটা নীলচে সবুজ। চোখের উপর চওড়া সাদা ছিটা-দাগ, সাদা মোটা ভ্রু ঘাড়ে গিয়ে ঠেকেছে। গলা, ঘাড় ও চিবুক কমলা রঙের ঘন ঝালরের মত পালকে আবৃত। ঘাড়ের ও গলার বাকি অংশ ঘন নীলচে পালকে আবৃত। ডানার গোড়ায় কালো-সাদা বলয় থাকে। ডানা হালকা পাটকিলে বর্ণের। দেহতল সাদা। পিঠ,লেজ ও ডানার প্রান্তভাগের পালকগুলো কালো। ঠোঁট পীচ ফলের মত লাল, ঠোঁটের অগ্রভাগ হালকা গোলাপী। চোখ ঘন বাদামি। পা কমলা-পীতাভ বর্ণের আর লিপ্তপাদ। পায়ের পর্দাগুলো কালো। প্রজনন ঋতু ব্যতীত অন্যান্য সময়ে পুরুষ হাঁস পুরোপুরি স্ত্রী হাঁসের মত। কেবল পিঠ চকচকে আর ঠোঁট লালচে থাকে।

স্ত্রী মান্দারিনের আবার এত রঙের বাহার নেই, বেশ সাদামাটা। স্ত্রী হাঁসের পিঠ জলপাই-বাদামি, দেহতল সাদা। বগলের উপর সারি সারি সাদা ফুটফুটে দাগ। বুকে অনেকগুলো সাদা রেখা দেখা যায়। ডানার মাথার পালকগুলো নীল, তার উপর সাদা ছোপযুক্ত। স্ত্রী হাঁসের চোখে সাদা “চশমা” থাকে, চক্ষু-রেখা সাদা। ঠোঁট হলদে। এমনিতে চোখ আর পা পুরুষ হাঁসের মতোই।

তথ্যসূত্র এবং ছবি ১ঃ উইকিপিডিয়া, ছবি ২ঃ গুগল ইমেজ