
দেলদুয়ার জমিদারবাড়ি টাঙ্গাইলের বিখ্যাত জমিদার বাড়িগুলোর একটি। জনদরদী ও দানবীর হিসেবে পরিচিত দেলদুয়ারের জমিদাররা নামের শেষে গজনভি পদবী ব্যবহার করতেন। আফগানিস্তানের গজনি থেকে এসেছিলেন জমিদারদের পূর্বপুরুষরা এখানে এসেছিলেন বলে তারা এই পদবি ব্যবহার করতেন। দেলদুয়ার জমিদারবাড়ির দু-জন বিখ্যাত ব্যক্তি হলেন স্যার আবদুল করিম গজনবী ও স্যার আবদুল হালিম গজনবী, যারা বেগম রোকেয়ার বোন করিমুন্নেসা খানম ও আব্দুল হাকিম খান গজনবীর পুত্র ছিলেন।
১৮৭২ সালে জন্ম নেওয়া স্যার আবদুল করিম গজনবী ইংল্যান্ড এবং জার্মানিতে পড়ালেখা করেন। ১৮৯৪ সালে তিনি জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ব্রিটিশ ভারত শাসনামলে ব্রিটিশ সরকারের দুইবার মন্ত্রী ছিলেন। তারা দুজনেই ব্রিটিশ সরকার কতৃক নাইট উপাধি লাভ করেন। দেশ ভাগের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে এই জমিদার বাড়ির জমিদারিরও সমাপ্তি ঘটে।
স্থাপত্যশৈলীঃ
প্রায় সাত ফুট দেয়ালে ঘেরা মূল একতলা ভবনটি ইংরেজ ঔপনিবেশিক স্থাপত্যশৈলীর আদলে তৈরি করা। এটি নর্থ হাউস নামেও পরিচিত। গাঢ় খয়েরি রঙের দেয়াল ও কারুকাজ করা সাদা রঙের দরজা-জানালা ভবনটিকে বহুগুণ আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ভবনের ছাদ চারদিক থেকে ছোট ছোট মিনার দিয়ে ঘেরা। জমিদার বাড়ির সামনে একদিকে সবুজ ঘাসের লন অন্যদিকে বাড়ির পারিবারিক গোরস্থান। বাড়ির পুর্ব পাশে সুন্দর কারুকাজ করা তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ রয়েছে। এই মসজিদের স্থানে পুর্বে আরেকটি মসজিদ ছিল। প্রায় দুই ফুট উঁচু ভিত্তির উপর স্থাপিত বর্তমান মসজিদটি ১৮৯০ সালের দিকে নির্মাণ করেন আবদুল করিম গজনবী। মসজিদের সামনে অর্ধডিম্বাকৃতি বারান্দা দাঁড়িয়ে আছে গ্রীক স্থাপত্যের অনুকরণে সাজানো ছয়টি থামে ভর করে।
বাড়ির পিছন দিকে বড় আম বাগান এবং বাড়ির নারীদের সময় কাটানোর জন্য বাগানে বানানো হয়েছে টালি দেয়া একটি বাগানঘর।

কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলগামী যে কোন বাসে চড়ে পাকুল্লা বাইপাসে নেমে যাবেন। সেখান থেকে অটোরিকশায় মাত্র দশ মিনিটেই চলে যেতে পারবেন দেলদুয়ার জমিদারবাড়ি। ভাড়া ঢাকা থেকে জমিদারবাড়ি পর্যন্ত ১০০-১৫০ টাকা।
এছাড়া ঢাকার কমলাপুর ও বিমানবন্দর স্টেশন থেকে টাঙ্গাইলগামী যে কোন ট্রেনে চড়ে মাহেরা স্টেশনে নেমে যাবেন, ভাড়া পড়বে ৯০-৩০০ টাকা। মাহেরা স্টেশন থেকে মাহেরা জমিদারবাড়ি দেখে সরাসরি দেলদুয়ার জমিদারবাড়ি যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেনঃ
টাঙ্গাইল জেলা বিভিন্ন জমিদারবাড়ি এবং পুরাকীর্তিতে সমৃদ্ধ। তাই আপনি এখানে আসলে অন্তত দু-দিন সময় নিয়ে আসবেন। টাঙ্গাইলে রাত্রিযাপনের জন্য ভালমানের সরকারি বেসরকারি বেশ কিছু রেস্ট হাউজ, বাংলো ও হোটেল রয়েছে। এছাড়াও যমুনা রিসোর্ট, এলেঙ্গা রিসোর্টসহ বেশ কিছু বেসরকারি রিসোর্ট রয়েছে। যেখানে রাত যাপনের পাশাপাশি বিনোদনের ব্যবস্থাও রয়েছে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
কি খাবেনঃ
টাঙ্গাইল ঘুরতে গেলে অবশ্যই এখানকার বিখ্যাত পোড়াবাড়ির চমচম খেতে ভুলবেন না। এছাড়া টাঙ্গাইলের দই ও মিষ্টি খেতে ভুলবেন না।
কী কী দেখবেনঃ
১। দেলদুয়ার জমিদারবাড়ি ও মসজিদ
৪। আতিয়া মসজিদ
৫। পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি
৬। নাগরপুর জমিদারবাড়ি
ছবিঃ জোবায়ের রায়হান
কৃতজ্ঞতাঃ জামান, মমিন ও জীবন।