সতর্কতাঃ খৈয়াছড়া ঝর্ণা যাওয়ার ঝিরিপথ বেশ দুর্গম। ঝর্ণার উপরের ধাপগুলো অত্যন্ত বিপদজনক ও পিচ্ছিল। প্রতি বছর অনেক পর্যটক এখানে নিহত হন, প্রচুর মানুষ মারাত্মকভাবে আহত হন। খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণে আপনার সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যানের একটি জলপ্রপাত। এটিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাতগুলোর একটি বলে মনে করা হয়। দুর্গমতার কারণে বহুদিন পর্যন্ত এই জলপ্রপাত সাধারণ ভ্রমণকারীদের জানাশোনার আড়ালেই ছিল। ২০১০ সালের দিকে সরকার এই অঞ্চলকে জাতীয় উদ্যানের অংশ হিসেবে ঘোষণা করার পর বেশ কিছু এডভেঞ্চার ট্রাভেলার অন্যান্য ঝর্ণার সাথে এই ঝর্ণাটিরও সন্ধান পান।
বাংলাদেশের অন্যান্য ঝর্ণার তুলনায় খৈয়াছড়া ঝর্ণা বেশ দুর্গম ও বিপদজনক। সাধারণ ভ্রমণকারীদের জন্য বা যারা পরিবার নিয়ে বেড়াতে যেতে চান তাদের জন্য এই ঝর্ণাটি আদর্শ নয়। তবে আপনি যদি এডভেঞ্চার প্রিয় হয়ে থাকেন এবং শারীরিকভাবে যথেষ্ট সামর্থ্যবান হন, তাহলে খৈয়াছড়া ঝর্ণা আপনার জন্য। ঝর্ণার প্রথম ধাপটি অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর, বিশাল জলরাশি প্রায় ৪০০ ফুট উপর থেকে ধাপে ধাপে নেমে আসার দৃশ্য দেখে অনেকদূর ট্র্যাকিং করার ক্লান্তি দূর হয়ে যায় মুহূর্তেই। উপরের দিকের ধাপগুলো অত্যন্ত বিপদজনক বিধায় সেগুলো চড়ে উপরে উঠতে পারাটা বেশ কষ্টসাধ্য। পূর্ব অভিজ্ঞতা ও সার্বক্ষনিক সতর্কতা না থাকলে উপরে উঠা ঠিক নয়। তবে একবার উপরে উঠতে পারলে যে দৃশ্য দেখা যায় সেটা অবর্ণনীয়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে নবম ধাপ থেকে খালি চোখেই সমুদ্র দেখা যায়।

খৈয়াছড়া শুধু ঝর্ণাই নয়, বিচিত্র উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণীতেও সমৃদ্ধ। বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যানের বনাঞ্চলে হরিণ, ভাল্লুক, খরগোশ, অজগর, বনমোরগ, বন ছাগল, শুকর ও বিরল প্রজাতির অসংখ্য পাখি রয়েছে।
খৈয়াছড়া ঝর্ণার পাশাপাশি বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান অঞ্চলে আরও বেশ কিছু ছোট-বড় ঝর্ণা রয়েছে। এর মধ্যে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা, ছোটকমলদহ ঝর্ণা, বড় কমলদহ ঝর্ণা ভ্রমণকারীদের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে।

কিভাবে যাবেনঃ
রেলযোগেঃ ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোন আন্তঃনগর ট্রেনে চড়ে নেমে মীরসরাই স্টেশনে নেমে যাবেন। ভাড়া ২৮৫ থেকে ১১৭৯ টাকা। মীরসরাই থেকে অটোরিকশায় সরাসরি খৈয়াছড়া ঝর্ণার ট্রাইল পর্যন্ত চলে যেতে পারবেন। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৩০-৪০ টাকা।
সড়কযোগেঃ ঢাকার কমলাপুর ও সায়দাবাদ থেকে প্রতিদিন বিআরটিসি, হানিফ, শ্যামলীসহ অসংখ্য বাস চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সেগুলোর যে কোন একটাতে চড়ে নেমে যাবেন বড়তাকিয়া বাজারে। সময় লাগে ৬-৭ ঘণ্টা। ভাড়া ৫০০-১৫০০ টাকা। বড়তাকিয়া থেকে হেঁটেই সরাসরি খৈয়াছড়া যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন?
বড়তাকিয়া বা খৈয়াছড়া এলাকায় থাকার জন্য ভালো কোন আবাসন ব্যবস্থা নেই। তবে স্থানীয় লোকদের সাথে কথা বলে তাদের বাড়ীতে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকতে পারবেন। তাছাড়া আপনার সাথে অতিরিক্ত ব্যাগ ও জিনিসপত্রও তাদের কাছে রেখে যেতে পারবেন। মিরেরসরাইয়ে বেশ কিছু হোটেল আছে। ভাড়া পড়বে সিজনভেদে ৩০০-১০০০ টাকা জনপ্রতি।
কী খাবেন?
খৈয়াছড়ায় ঝর্ণা ঘুরতে গেলে অবশ্যই নিজেদের খাবার সাথে করে নিয়ে যাওয়া উচিত। বড়তাকিয়া বাজারে কয়েকটি খাবারের দোকান আছে, সেখান থেকেও খাবার নিয়ে যেতে পারেন। ঝর্ণা এলাকার কাছাকাছি কোন খাবারের হোটেল নেই। খাবার না নিয়ে গেলে বিপদে পড়তে হতে পারে। তবে স্থানীয়দের বাড়িতেও খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেন। ঝর্ণায় যাওয়ার আগে কথা বলে টাকা দিয়ে রাখলে ওরা খাবার বানিয়ে রাখে। এছাড়া সাথে করে বিস্কুট ও মুড়ির মত শুকনা খাবারও নিয়ে যাবেন। পর্যাপ্ত খাবার পানি সাথে নিয়ে যাবেন।
যা করবেন
১। বর্ষাকালে ঝর্ণায় ঘুরতে গেলে অবশ্যই সাথে মশাবিরোধী মলম ও জোঁকের জন্য লবণ নিয়ে যাবেন।
২। লাঠি, টর্চ, দড়ি ও জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধ সাথে নিয়ে যাবেন।
৩। হালকা কাপড় ও রাবারের জুতা পরে ট্র্যাকিং করবেন, প্রায় সবটুকু পথই ঝিরি ধরে যেতে হবে।
যা করবেন না
১। শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে খৈয়াছড়ায় যাবেন না।
২। যথেষ্ট প্রস্তুতি ও শারীরিক সামর্থ্য না থাকলে ঝর্ণার উপরের ধাপগুলোতে চড়ার চেষ্টা করবেন না।
৩। ঝর্ণা ও ঝিরিতে প্লাস্টিকসহ কোন ধরণের অপচনশীল আবর্জনা ফেলবেন না।
আরও ভিজিট করুনঃ কাপ্তাই লেক , সেন্ট মার্টিন
ছবিঃ জোবায়ের রায়হান