
বাংলাদেশের যে কয়টি স্থান থেকে যুগপৎ সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায় কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত তার মধ্যে একটা। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত অবস্থিত। ভ্রমণকারীদের কাছে কুয়াকাটা “সাগর কন্যা” হিসেবেও পরিচিত। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ কিলোমিটার। এই সমুদ্রসৈকতটি মূলত আন্ধারমানিক ও গলাচিপা নদীর মোহনায় অবস্থিত। এর ফলে এই সৈকতের পানি কিছুটা ঘোলাটে এবং বালির পরিমাণ কম। তবে শুধু সৈকত নয়, বরং কুয়াকাটার আরও বেশ কিছু প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখার জন্য মানুষ কুয়াকাটায় বেড়াতে আসে। এখানকার নির্জন ঝাউবন, নারকেল বাগান আর কেওড়াবন পর্যটকদের মুগ্ধ করে রাখে। এছাড়া এই সৈকতটি এখনো কক্সবাজারের মত জনবহুল ও দুষিত হয় নি। তাই নিরিবিলি কয়েকটি দিন কাটাতে অনেকেই ছুটে আসেন কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে।

কিভাবে যাবেনঃ
জলপথেঃ ঢাকা বা দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা হলো জলপথ। ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন সুন্দরবন-৯, সুন্দরবন-১৪, কুয়াকাটা-১ সহ বেশ কিছু উন্নতমানের লঞ্চ পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে চলাচল করে। পটুয়াখালী থেকে বাসে সরাসরি কুয়াকাটা যেতে পারবেন। ভাড়া পড়বে ১৫০-১০০০ টাকা।
সড়কপথেঃ ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন সাকুরা, সুরভিসহ অসংখ্য বাস কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া কমলাপুর বিআরটিসি বাস স্টেশন থেকেও প্রতিদিন কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে কয়েকটি বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া পড়বে ৪৫০-১০০০ টাকা।
কোথায় থাকবেনঃ
থাকার জন্য কুয়াকাটায় বিভিন্ন মানের অসংখ্য আবাসিক হোটেল আছে। মান অনুযায়ী এসব হোটেলে একরাত থাকতে জনপ্রতি ৩০০-৪০০০ টাকা খরচ হবে। বনানী প্যালেস, হোটেল কুয়াকাট ইন, হোটেল নীলাঞ্জনা, হোটেল গোল্ডেন প্যালেস এসব হোটেল কুয়াকাটায় বেশ ভালো মানের। এছাড়াও পূর্বে অনুমতি নিয়ে পর্যটন মোটেল, সরকারি গেস্ট হাউস ও ডাক বাংলোতে থাকতে পারবেন।
কী খাবেনঃ
কুয়াকাটায় হোটেলগুলো নিজস্ব রেস্টুরেন্টে তাদের অতিথিদের খাবারের জন্য ব্যবস্থা করে। এছাড়া এখানকার স্থানীয় রেস্টুরেন্টেও বিভিন্ন রকম দেশী খাবার পাওয়া যায়। সাগরের তাজা মাছের বিভিন্ন পদ পাওয়া যায়, চেষ্টা করবেন সেগুলো খেতে। এছাড়াও জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনে নিজেরাও বার-বি -কিউ করতে পারেন।
যারা মদ্যপান পছন্দ করেন তারা স্থানীয় রাখাইন আদিবাসীদের বানানো ওয়াইন পান করে দেখতে পারেন।
কী দেখবেনঃ
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ছাড়াও আরও যেসব দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে যেতে পারেনঃ
১। কাঁকড়ার চরঃ সৈকত ধরে পুর্বদিকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে কাঁকড়ার চর। এখানে আসলে দেখতে পাবেন অসংখ্য লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি।
২। শুটকি পল্লীঃ জেলেরা এখানে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের শুটকি তৈরি করে। চাইলে আপনি সরাসরি এখান থেকেও শুটকি কিনতে পারেবেন।
৩। ফাতরার বনঃ সমুদ্রসৈকত থেকে পশ্চিমে প্রায় আন্ধারমানিক নদীর অন্য পাড়ে ফাতরার বন অবস্থিত। এই বনটি মূলত একটি শ্বাসমূলীয় চিরসবুজ বন। নৌকা ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারেন ফাতরার বনে। এখানে রয়েছে কেওড়া, গেওয়া, সুন্দরী, ফাতরা, গরান, বাইন, গোলপাতা ইত্যাদি ম্যানগ্রোভ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং বানর, শূকরসহ অসংখ্য জীবজন্তু ও পাখি।

৪। সীমা বৌদ্ধ মন্দির – প্রাচীন কুয়াটির সামনেই রয়েছে প্রাচীন সীমা বৌদ্ধ মন্দির, যাতে রয়েছে প্রায় সাঁইত্রিশ মন ওজনের অষ্ট ধাতুর তৈরি ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের মূর্তি।
৫। মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির – কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পূর্বে রাখাইন আদিবাসীদের আরকেটি বাসস্থল মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে আরেকটি বৌদ্ধ মন্দির। এ মন্দিরেই রয়েছে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তি। এখান থেকে কিছু দূরে আমখোলা পাড়ায় রয়েছে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় রাখাইন বসতি।
৬। গঙ্গামতির জঙ্গল – কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূব দিকে গঙ্গামতির খালের পাশে গঙ্গামতি বা গজমতির জঙ্গল। এই বনে কেওড়া, গেওয়া, ছৈলা, খৈয়াসহ বহু প্রজাতির উদ্ভিদ এবং বুনো শূকর, সাপ, বন মোরগসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী দেখা যায়।
যা করবেনঃ
১। জোয়ার-ভাটা হিসেব করে সমুদ্রে নামবেন।
২। প্রয়োজনীয় খাবার পানি ওষুধ ও ফাস্ট এইড সঙ্গে রাখবেন।
৩। রাখাইনদের কাছ থেকে মদ কিনতে চাইলে একা না গিয়ে স্থানীয় বিশ্বস্ত কোন লোকের সঙ্গে যাবেন।
৪। সূর্যোদয় দেখতে চাইলে অবশ্যই ভোরের আলো ফোটার আগেই বেড়িয়ে পড়ুন। কারণ আপনাকে হেঁটে হেঁটে কাঁকড়ার চর পর্যন্ত যেতে হবে সূর্যোদয় দেখতে চাইলে।
যা করবেন নাঃ
১। সৈকতে ও সমুদ্রে যে কোন ধরণের বর্জ্য ফেলা থেকে বিরত থাকুন।
২। সঙ্গে শিশু থাকলে জঙ্গলে ঘোরার পরিকল্পনা বাদ দিন।
৩। রাখাইন ও স্থানীয়দের বিশ্বাস ও জীবনযাত্রাকে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করবেন না।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ জোবায়ের রায়হান, আবদুল্লা মাহমুদ
আরও ভিজিট করুনঃ খৈয়াছড়া ঝর্ণা