প্রাচীন পানাম নগর

পানাম নগরের মূল সড়কের দুপাশে শতাব্দী প্রাচীন ভবন।

ঢাকা থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে প্রাচীন পানাম নগর অবস্থিত। প্রায় ৭০০ বছরের পুরনো ইতিহাসসমৃদ্ধ এই প্রাচীন রাজধানী ও লোকশিল্প জাদুঘরে একদিনেই ঘুরে আসা যায়। ঢাকার এতো কাছে প্রাচীন বাংলার বিভিন্ন স্থাপত্য ও পুরাকীর্তি দেখতে সারা বছর পর্যটকদের সমাগম লেগেই থাকে।

সোনারগাঁ বাংলার মুসলিম শাসকদের অধীনে পূর্ববঙ্গের একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র একসময়। প্রায় ২০ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে উঠাবড় নগর, খাস নগর, পানাম নগর – প্রাচীন সোনারগাঁর এই তিন নগর মিলে ছিল প্রাচীন বাংলার রাজধানী। কয়েক শতাব্দী পুরনো ভবনগুলো এখনো সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে বাংলার বারো ভুঁইয়াদের ইতিসের সাক্ষী হিসেবে। ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ড পানাম নগরকে বিশ্বের ধ্বংসপ্রায় ১০০টি ঐতিহাসিক স্থাপনার একটি হিসেবে ঘোষণা করে। মুঘল সুবেদার ইসলাম খাঁর আমলে ১৬০৮ সালে ঢাকায় রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার পর সোনারগাঁয়ের গুরুত্ব কমে যেতে থাকে।

পানাম নগরের একটি দোতলা প্রাসাদ।

পানাম নগরের বাড়িগুলোর মধ্যে ৫২টি বাড়ি এখনো টিকে আছে। বাড়িগুলোর অধিকাংশই আয়তাকার, উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত, উচ্চতা একতলা থেকে তিনতলা। বাড়িগুলোর স্থাপত্যে ঔপনিবেশিকতা ছাড়াও মোগল, গ্রিক এবং গান্ধারা স্থাপত্যশৈলীর সাথে স্থানীয় কারিগরদের শিল্পকুশলতার অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায়। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই খিলান ও ছাদের মধ্যবর্তী স্থানে নীল ও সাদা ছাপ দেখা যায়। এর সাথে আছে সিরামিক টাইল‌্‌সের রূপায়ণ। প্রতিটি বাড়িই অন্দরবাটি এবং বহির্বাটি -এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। বেশিরভাগ বাড়ির চারদিকের ঘেরাটোপের ভিতর আছে উন্মুক্ত উঠান।

পানাম নগরের প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি স্থাপনা

পানাম নগরের কাছেই ১৯৭৫ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের উদ্যোগে বাংলাদেশের লোকশিল্পের সংরক্ষণ, বিকাশ ও সর্বসাধারণের মধ্যে লোকশিল্পের গৌরবময় দিক তুলে ধরার জন্য এই জাদুঘর স্থাপিত হয়।

কিভাবে যাবেনঃ

সড়কপথেঃ ঢাকার গুলিস্তান থেকে প্রতিদিন সোনারগাঁর উদ্দেশ্যে অসংখ্য বাস ছেড়ে যায়। বাসযোগে মোগড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড নেমে যাবেন। ভাড়া পড়বে ৬০-৭০ টাকা। সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশা বা রিকশাযোগে পানাম নগর চলে যাবেন। ভাড়া ২০-৩০ টাকা।

কোথায় থাকবেনঃ

সোনারগাঁ পানাম নগর ও লোকশিল্প যাদুঘরে ঢাকা থেকে গিয়ে দিনে দিনেই ফিরে আসা যায়। তবে যারা দেশের অন্যান্য স্থান থেকে আসবেন তারা সোনারগাঁ রয়েল রিসোর্টে থাকতে পারেন। এছাড়া উপজেলা পরিষদের ডাক বাংলোয় থাকতে পারবেন। এছাড়া মোগরাপাড়া এলাকায় বেশ কিছু মাঝারি মানের বেসরকারি হোটেল আছে। ভাড়া পড়বে ৫০০-২৫০০ টাকা।

কী খাবেনঃ

সোনারগাঁ পানাম নগর ও জাদুঘর এলাকায় প্রচুর খাবার রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে খেতে পারেন। তবে খাবারের মান ও দাম আগেই জিজ্ঞেস করে নেবেন। কারণ এরা সুযোগ পেলেই ভ্রমণকারীদের ঠকায়।

সুযোগ পেলে কারুপল্লী থেকে দেশীয় বিভিন্ন খাবার যেমন, মুড়ি-মুড়কি, গজা, জিলিপি, মিষ্টি, পিঠা এসব খেতে ভুলবেন না। শীতকালে গেলে খেজুরের রস ও গুড় কিনতে পারবেন।    

আরও যা দেখবেনঃ

১। লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরঃ পানাম নগর থেকে হাঁটা পথে মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্বে লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর অবস্থিত। এখানে বাংলার প্রাচীন সুলতানদের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র, তৈজসপত্র, পোশাক, বর্ম, অলংকার ইত্যাদি সংরক্ষিত রয়েছে। প্রাচীন ও মধ্য যুগের লোকশিল্পের অনেক নিদর্শনও রয়েছে এখানে, রয়েছে বাংলার প্রাচীন মুদ্রা।

কারুপল্লীতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দক্ষ কারুশিল্পীদের তৈরি বাঁশ ও বেতের তৈরি আসবাব, কাঠ খোদাই করা খেলনা, মাটির তৈরি পুতুল, জামদানি শাড়ি, নকশিকাঁথা, মৃৎপাত্রসহ বিভিন্ন কারুপণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করা হয়। এছাড়া প্রতি বৈশাখ মাসে এখানে সাড়ম্বরে আয়োজিত হয় লোকশিল্প মেলা। এ মেলায় লোকসংগীত, যাত্রাপালা, কবিগান ইত্যাদি লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানমালা পরিবেশন করা হয়।

২। বাংলার তাজমহলঃ ভারতের আগ্রার তাজমহলের অনুকরণে শিল্পপতি আহসান উল্লাহ মনি সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়নের পেরাব গ্রামে নির্মাণ করেছেন বাংলার এই তাজমহল। সোনারগাঁ ঘুরতে আসলে এখানেও ঘুরে যেতে পারেন।  

যা করবেনঃ

১। ঢাকা থেকে আসলে চেষ্টা করবেন ভোরে বের হতে, সকালের সোনারগাঁ অনেক মনোরম। ঘোরাঘুরি শেষে সন্ধ্যা নামার আগেই ফিরে আসুন।

২। মেলা থেকে দেশি খাবারের পাশাপাশি শিশুদের জন্য দেশীয় খেলনা কিনে নিয়ে যেতে পারেন।

৩। প্রয়োজনীয় খাবার পানি ওষুধ ও ফাস্ট এইড সঙ্গে রাখবেন।

যা করবেন নাঃ

১। নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা থেকে বিরত থাকুন।

২। নিষিদ্ধ স্থানে ছবি তোলা থেকে বিরত থাকুন, প্রত্ন নিদর্শনে হাত দেয়া, বসা থেকে বিরত থাকুন।

তথ্য সহায়তাঃ উইকিপিডিয়া , ছবিঃ জোবায়ের রায়হাননিঝুম ডট কম

আরও ভিজিট করুনঃ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর