কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ক্যাম্পিং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সুযোগ পেলেই অনেকে একা বা দল বেঁধে সৈকতে বা পাহাড়ে চলে যান ক্যাম্পিং করতে। যারা নতুন ক্যাম্পিং করতে যাচ্ছেন তাদের জন্য ক্যাম্পিং সংক্রান্ত কিছু জরুরী টিপস জানিয়ে দিচ্ছি।

১। ক্যাম্পিং করার জন্য ভালো একটি তাবু খুব জরুরী। প্রথমেই ঠিক করে নিন কতজন ধারণ ক্ষমতার তাবু কিনবেন আপনি? আপনি যদি একা হন, তবে ছোট ও হালকা তাবু কিনুন যাতে আপনার ঘুমানোর পাশাপাশি জরুরী জিনিসপত্র সহজে রাখা যায়। অযথা বড় তাবু বা বহন করতে কষ্ট হয় এমন তাবু কিনবেন না। তাবু ছোট হলে আপনি অল্প স্থানেই ক্যাম্পিং করতে পারবেন পাশাপাশি আপনাকে অতিরিক্ত ওজনও বহন করতে হবে না। আপনার তাবুটি মজবুত ও সম্পূর্ণভাবে ওয়েদার সীলড কি না যাচাই করে কিনুন। স্লিপিং ব্যাগ কেনার ক্ষেত্রেও অবশ্যই হালকা ওজন ও ওয়েদার সীলড কিনা দেখে নেবেন।
২। যে স্থানে ক্যাম্প করবেন তার আশেপাশে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিন। খেয়াল করুন কোন মরা গাছ বা গাছের ডাল ঝুঁকে আছে কিনা। মরা গাছ বা ডাল ভেঙে পড়ে যে কোন সময় আপনি দুর্ঘটনায় পড়তে পারেন।
৩। যারা সাগর বা নদীর পাড়ে ক্যাম্প করবেন তারা অবশ্যই আবহাওয়া ও জোয়ার-ভাটার হিসেব করে তাবু স্থাপন করবেন। জোয়ারের সর্বোচ্চ স্থান থেকেও অন্তত ৫০ ফুট দূরত্বে উঁচু স্থানে বা বালিয়াড়িতে ক্যাম্প স্থাপন করুন। একদম খোলা সৈকতে ক্যাম্পিং করবেন না। পাহাড়ে বা জঙ্গলে ক্যাম্প করলে ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাড হবার সম্ভাবনা আছে এমন স্থানে তাবু স্থাপন করবেন না।
৪। বাতাসের গতি ঠিক করে নিরাপদ দূরত্বে ক্যাম্প ফায়ার জ্বালবেন। ভুল স্থানে ক্যাম্প ফায়ার জ্বাললে বিরক্তিকর ধোঁয়ার পাশাপাশি আগুনের ফুলকি বাতাসে ভেসে এসে আপনার তাবুতে আগুন লাগার মত ঘটনা পর্যন্ত ঘটতে পারে। অতিরিক্ত বাতাস থাকলে মাটিতে ছোট গর্ত খুড়ে আগুন জ্বালতে পারেন। এতে নিভে যাওয়ার ভয় থাকবে না।

৫। ক্যাম্প ফায়ারের কাঠ জোগাড় করার সময় খেয়াল রাখবেন ওই কাঠের জ্বালানী ক্ষমতা কতক্ষণ। কিছু কাঠ আছে অনেকক্ষণ ধরে জ্বলে, আবার কিছু কাঠ আছে দ্রুত জ্বলে নিভে যায়। আপনার কাছে পর্যাপ্ত কাঠ না থাকলে সারারাত আগুনবিহীন থাকতে হবে অথবা রাতের অন্ধকারে কাঠ খুঁজতে যেতে হবে। তাই যে কাঠ সংগ্রহ করবেন, সেটার জ্বালানী ক্ষমতা অনুযায়ী কাঠ সংগ্রহ করুন। মনে রাখবেন, শুকনা কাঠ খুব দ্রুত জ্বলে আর কাঁচা কাঠ অনেক সময় নিয়ে জ্বলে।
৬। সহজে বহনযোগ্য ও পুষ্টিকর খাবার রান্না করুন। ক্যাম্পিং করতে এসে মাংস-মাছ খেতে চাইলে আপনার রান্নার ঝামেলা বেড়ে যাবে। তাই শাক-সবজি, ডাল এসব খাবার মেনুতে বেশি রাখুন। তবে স্থানীয়ভাবে রান্নার উপকরণ সংগ্রহ করতে পারলে মাছ-মাংসও খেতে পারেন।
৭। চেষ্টা করুন ছোট, বহনযোগ্য ও হালকা রান্নার পাত্র কিনতে। একই পাত্রে পানি খাওয়া, রান্না করা, চা-কফি বানানোর কাজ হয় এমন পাত্র বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলো সংগ্রহ করুন। এতে আপনার রান্নার বোঝা অনেক কমে যাবে। সম্ভব হলে রান্নার পাত্রগুলোতে সিলিকা জেল রাখুন, এতে সেগুলো সহজে নষ্ট হবে না।
৮। ভেজা জুতো কতটা বিরক্তিকর হতে পারে ক্যাম্পার মাত্রই জানেন। ভেজা জুতো পরে থাকলে সেটা থেকে পায়ের বিভিন্ন সমস্যাও দেখা দিতে পারে। সেজন্য রাতে ঘুমানোর আগে আপনার ভেজা জুতোর ইনসোলটি খুলে আগুনের পাশে শুকোতে দিন।
৯। ক্যাম্পিং করার সময় উৎপন্ন সকল ময়লা-আবর্জনার জন্য বেশ কিছু ট্র্যাশ ব্যাগ রাখুন, যাতে আশেপাশের পরিবেশ নষ্ট না হয়। ক্যাম্পিং শেষে সেগুলো সঙ্গে নিয়ে আসুন এবং ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিন।
১০। ক্যাম্পিং শেষে ফেরার সময় যে স্থানে ক্যাম্প করেছেন সেখানকার অভিজ্ঞতা, সুবিধা, অসুবিধা এসব নোটবইয়ে লিখে রাখুন। ভবিষ্যতে আবার একই স্থানে ক্যাম্পিং করতে চাইলে কাজে লাগবে।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ pixby.com
আরও দেখুনঃ