ট্র্যাকিং স্বর্গ রেমাক্রি খাল

আমিয়াখুম_ঝর্ণা
রেমাক্রি খাল আমিয়াখুম ঝর্ণা নাম ধারণ করে এদিয়েছে সাঙ্গুর দিকে।

তারিক দীপ্তঃ বান্দরবানের থানচি উপজেলার একটি বিখ্যাত খাল হল রেমাক্রি খাল। বাংলাদেশে টাফ পাহাড় ট্রেকিং এর নামকরা গন্তব্যগুলোর বেশ কয়েকটি স্পট এই খালের উপর/পাশে অবস্থিত। এর মধ্যে আছেঃ নাফাখুম, অমিয়াখুম, রেমাক্রি ফলস, সাতভাইখুম, নাইক্ষমুখ, ভেলাখুম (অরিজিনাল), মেটাগঙ্গা ঝর্ণা, রামকফাখুম, ফাইপি ঝর্ণা, তলুবং ঝর্ণা (ডাবল ফলস), লুং সাইতার ঝর্ণা।

পুরো খালটিই থানচি উপজেলার মধ্যে পড়েছে। আপনার গন্তব্য যদি উপরের যেকোন একটি স্থানে হয়, আপনাকে কয়েকদিন এই খালের সাথেই কাটাতে হবে ধরে নিন। খালটির প্রায় পুরো অংশই পাথরময় ও খরস্রোতা।

খালের উৎস ও সমাপ্তিঃ

থানচি উপজেলার গহীন পার্বত্য এলাকার তলুবং ঝর্ণা ( ডাবল ফলস নামে পরিচিত) থেকে রেমাক্রি খালের উৎপত্তি। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে দক্ষিণদিকে এগোতে থাকে খালটি। এর প্রথম দিকেই পড়ে ফাইপি ঝর্ণা। এরপর লউম-উয়াল পাড়া ও সিলপি পাড়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। সিলপি পাড়ার কাছে খালের সাথে যোগ হয়েছে লুং সাইতার ঝর্ণা।

এরপর হানঝুরাই পাড়া এলাকায় এসে খালটি দক্ষিণ-পশ্চিমে এগোতে থাকে। বুলং পাড়া পার হয়ে খালের কাছাকাছি দেখা যায় বেশ কিছু খুম। উজান থেকে প্রথমটি হল ভেলাখুম (অরিজিনাল)। এরপর নাইক্ষমুখ (যেটি সাধারণ ভেলাখুম নামে পরিচিত) হয়ে দেবতা পাহাড়ের পাশে বড় বাঁক নিয়ে আরেকটি ফলস সৃষ্টি করে, যার নাম অমিয়াখুম। অমিয়খুম দেখতে কতটা যে সুন্দর, তা ক্যামেরার ছবিতে বোঝানো কঠিন।

খালটি অমিয়াখুম থেকে আরেকটি বাঁক পেরিয়ে সাতটি পাথরের একটি খুম সৃষ্টি করে, যা সাতভাইখুম নামে পরিচিত। যারা ট্রেকিং করে এই এলাকা দেখতে আসে, অমিয়াখুম থেকে সাতভাইখুম এবং ভেলাখুম যাওয়ার মাধ্যম হল মূলত ভেলা, যেহেতু খাঁড়া পাথুরে পাহাড়ে হাঁটা অসম্ভব।

এরপর কয়েকটি বড় বাঁক নিয়ে থুইসাপাড়া এবং জিনাপাড়ার পশ্চিম পাশ দিয়ে খালটি দক্ষিণে এগোতে থাকে, থুইসাপাড়া থেকে কাছেই রয়েছে মেটাগঙ্গা ফল।

রেমাক্রি খাল অউলাপাড়া পার হয়ে আরেকটি বিখ্যাত ঝর্ণা নাফাখুম পার হয়ে যায়। উপরের কিছু স্থানে যাওয়া অনেক কঠিন হলেও নাফাখুম পর্যন্ত যাওয়া তুলনামূলক সহজ। তাই এই পর্যন্ত প্রচুর মানুষ যাওয়া আসা করে।

নাফাখুম এর পর খালটি মোটামুটি প্রশস্ত এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ। দক্ষিণ-পশ্চিমে এভাবে বেশ কিছুদূর এগিয়ে রেমাক্রি বাজার এলাকায় এসে খালটি সাঙ্গু নদীতে মিশেছে। তবে, সাঙ্গু নদীতে পড়ার স্থানেই সৃষ্টি করেছে রেমাক্রি ঝর্ণার। আর এছাড়া নাফাখুম-রেমাক্রির পাশের ছোট খাল দিয়ে কিছুদূর গেলেই পড়ে রামাকফাখুম।

এই হল খালটির বৃত্তান্ত। ভয়ংকর সুন্দর এই খাল এবং তার পাশের বিখ্যাত ঝর্ণাগুলোর নাম অনেকেই শুনেছেন, কখনো হয়তো যাওয়ার ইচ্ছাও করেছে। সময় নিয়ে এডভেঞ্চার করতে বেরিয়ে পড়ুন। বলে দিতে পারি, সারাজীবন মনে রাখার মত এক্সপেরিয়েন্স হবে। গাইডের নির্দেশনা মেনে চললে ঝুঁকিও কম হবে। তবে এজন্য যথেষ্ট শরীরের সক্ষমতাও জরুরী। তবে সবচেয়ে জরুরী যে জিনিস, তা হল প্রবল ইচ্ছাশক্তি। পথে বাঁধা আসবে অনেকবার, কিভাবে পার হচ্ছেন তা পরে চিন্তা করলেও আপনার অবাক লাগবে। এডভেঞ্চার তো এইটাই, কিছুটা টেনশন, কিছুটা থ্রিল নিয়েই পুরো ট্যুর শেষ করতে হবে।

উপরের তথ্যগুলো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও গুগল ম্যাপ থেকে নেওয়া।

পরিশেষে, এসব স্পট প্রাকৃতিকভাবেই অনেক সুন্দর। আমরা উপভোগ করতে, অভিজ্ঞতা নিতে যেতে পারি। কিন্ত নোংরা করার কোন অধিকার নেই আমাদের। তাই সবার প্রতি অনুরোধ, কেউ খাবারের প্যাকেট, অন্যান্য ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলে আসবেন না।

মূল লেখাঃ Travelers of Bangladesh থেকে নেয়া।

ছবিঃ কাজী মাহমুদুর রহমানলাজ মাহমুদ

আরও ভিজিট করুনঃ খৈয়াছড়া ঝর্ণা