
বাংলাদেশে রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম নিরবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত। এতো সুন্দর সৈকত ছেড়ে অনেকেই চান না হোটেলের ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে। তাই বাংলাদেশেও বীচ ক্যাম্পিং বা সৈকত ক্যাম্পিং ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু, অফিসের সহকর্মী কিংবা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সৈকতের খোলা আকাশের নিচে ক্যাম্পিং করতে চাইলে আপনাকে মানতে হবে কিছু নিয়ম, লাগবে কিছু বিশেষ উপকরণ।
দেখে নিন সৈকতে ক্যাম্পিং করার কিছু জরুরি টিপসঃ
১। সঠিক স্থান নির্বাচন করুন
সৈকতে ক্যাম্পিং করার জন্য সঠিক স্থান নির্বাচন করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এমন স্থানে তাবু স্থাপন করুন যেখানে জোয়ারের পানি আসে না। সৈকতের কাছে ঝাউবন, উঁচু টিলা বা বালিয়াড়িতে তাবু স্থাপন করতে পারেন। প্রয়োজনে স্থানীয় কারো কাছে তথ্য নিয়ে নিতে পারেন। জোয়ার আসে এমন স্থানে ক্যাম্পিং করলে জিনিসপত্র নষ্ট হবার পাশাপাশি জীবনহানির আশঙ্কাও থাকে।
আপনি যে স্থানে ক্যাম্পিং করতে চাইছেন সেখানে ক্যাম্পিং করতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা জেনে নিন। পাশাপাশি ওই স্থানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন সেটা সম্পর্কেও ধারণা নিন। প্রয়োজনে নিকটস্থ থানায় অবহিত করে রাখুন।
২। বীচ ক্যাম্পিং উপযোগী তাবু ও অন্যান্য সরঞ্জাম সঙ্গে নিন
সৈকতে ব্যবহার উপযোগী তাবু ও অন্যান্য সরঞ্জাম বেছে নেয়াটা বীচ ক্যাম্পিং এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সৈকতে সাধারণত বাতাসের তীব্রতার পাশাপাশি বাতাসও ভেজা থাকে। তাই সৈকতে ক্যাম্পিং করার জন্য তিন সিজনের তাবু কিনতে পারেন। তবে শীতকালে ক্যাম্পিং করলে তিন সিজনের তাবু দিয়েও কাজ চলবে। খেয়াল রাখবেন তাবুটি যেন সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি প্রতিরোধী হয়। কারণ সৈকতের কড়া সূর্যালোক আপনার ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। তাবুর সাথে স্লিপিং ব্যাগ বা বহনযোগ্য বিছানা নিয়ে নিন।
তাবুর পাশাপাশি রান্না করার জন্য সহজে বহনযোগ্য গ্যাস স্টোভ নিয়ে নিতে পারেন, কারণ সৈকতে বাতাসের জন্য আগুন জ্বেলে রান্না করা বেশ কষ্টসাধ্য।
৩। পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
ক্যাম্পিং কালে স্বাস্থ্যসম্মত বাথরুমের ব্যবস্থা করা খুব জরুরি একটি বিষয়। আমরা অনেকেই এটিকে গুরুত্ব দিতে চাই না। ক্যাম্পিং বাথরুমের জন্য বহনযোগ্য কমোড পাওয়া যায় বাজারে, সেগুলো সঙ্গে নিয়ে নিতে পারেন। অথবা ক্যাম্প থেকে দূরে নির্জন স্থানে ৩-৪ ফুট গর্ত করে অস্থায়ী বাথরুম তৈরি করে নিতে পারেন। তবে অবশ্যই ক্যাম্পিং শেষে গর্তটি মাটি দিয়ে ভালোভাবে চাপা দিয়ে দিন।
ক্যাম্পিং করাকালে আপনার জমে যাওয়া আবর্জনা কালো মোটা পলিথিনে জমা রাখুন। ক্যাম্পিং শেষে সেগুলো বহন করে সৈকতের বাইরে ময়লা ফেলার স্থানে ফেলে দিন।
৪। আবহাওয়া ও সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখুন
সাগরের আবহাওয়া প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হয়। তাই সবসময় আবহাওয়া ও সাগরের জোয়ার-ভাটা সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ রাখুন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায় সেজন্য সতর্ক থাকুন।
৫। ক্যাম্প ফায়ারের নিয়ম-কানুন
ক্যাম্প ফায়ার করার সময় চেষ্টা করুন চারদিকে পাথর দিয়ে ঘেরাও করে রাখতে, এতে বাতাসে সহজে আগুন নিভে যাবে না। পাথর না পেলে বালিতে গর্ত খুঁড়ে নিতে পারেন। কখনোই তাবুর কাছাকাছি এবং বাতাসের বিপরীতে ক্যাম্প ফায়ার করবেন না। এতে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
রাতের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানী সংগ্রহ করে রাখুন। ক্যাম্পিং শেষে অবশ্যই পানি ঢেলে আগুন ভালোভাবে নিভিয়ে দিন এবং অতিরিক্ত কাঠ-কয়লা গর্ত করে পুতে ফেলুন, যাতে পরিবেশের ক্ষতি না হয়।
আরও দেখুনঃ কেমন তাবু কিনবেন?