
ক্যাম্পিং করতে গিয়ে আমরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ি খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা এবং খাবার তৈরির সরঞ্জাম বহন ও সঠিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে। সাধারণত এক-দুই দিনের ক্যাম্পিং করার জন্য তেমন বেশি খাবার নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আবার ক্যাম্প সাইটের কাছাকাছি লোকালয় বা রেস্টুরেন্ট থাকলে অনেকেই ক্যাম্পিং-এ রান্নাবান্না করার ঝামেলায় যেতে চান না।
তবে ক্যাম্পিং সাইট যদি নির্জন স্থানে হয় এবং আপনি যদি কয়েকদিনের জন্য ক্যাম্পিং করতে চান, তাহলে শুকনো খাবার দিয়ে চালাতে পারবেন না। রান্না আপনাকে করতেই হবে। আর ক্যাম্পিং করতে গিয়ে যদি নিজেদের রান্না করা খাবার না খেতে পারেন, তবে ক্যাম্পিং-এর মজা অনেকটাই নষ্ট হয়ে যাবে। তবে রান্না করার ঝামেলাও কিন্তু কিছুটা আছে, এক্ষেত্রে মানতে হবে কিছু নিয়ম, সঙ্গে নিতে হবে সঠিক ও কাজের জিনিসগুলো।
আসুন দেখে নেই ক্যাম্পিং-এ রান্না ও খাওয়া-দাওয়ার বেশ কিছু টিপস।
১। রান্নার সরঞ্জামগুলো পরীক্ষা করে নিন

আপনি যদি গ্যাস স্টোভ বা তেলের চুলায় রান্না করতে চান, তাহলে সেটা নতুন পুরনো যাই হোক, যাত্রা শুরু করার আগেই ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিন ঠিকমত কাজ করছে কিনা। ক্যাম্প সাইটে গিয়ে যদি দেখেন সেটা নষ্ট, তাহলে কিছুই করার থাকবে না। পাশাপাশি ম্যাচ, গ্যাস লাইটার সঙ্গে নিয়েছেন কিনা চেক করে নিন।
যারা ক্যাম্পফায়ারে রান্না করতে চান, তাদের আলাদা চুলা বহন করার ঝামেলায় যেতে হয় না। তবে বৃষ্টির দিনে ক্যাম্পফায়ারে রান্না করার পরিকল্পনা না করাই ভালো।
সম্ভব হলে একটু তুলায় ভ্যাসলিন মাখিয়ে একটা কৌটা বা প্লাস্টিকে মুড়ে সঙ্গে নিয়ে নিন। বৃষ্টির দিনে বা ভেজা আবহাওয়ায় সহজে আগুন জ্বালাতে পারবেন।
২। ভালমানের রান্নার পাত্র নির্বাচন করুন

ব্যাগের ওজন কমানোর জন্য ক্যাম্পিং-এ রান্না করতে সাধারণত একটিই পাত্র ব্যবহৃত হয়। সে পাত্রে ভাত-তরকারি, ভাজি, চা-কফি সবই রান্না করা হয়। সেজন্য খুব ভালো মানের ও মজবুত পাত্র কিনুন, যাতে ভ্রমণের ধকল সইতে পারে।
রান্না করার আগে পাত্রের গায়ে পাতলা করে কাঁদা মাখিয়ে নিন, এতে পাত্রে কালি লাগবে না এবং রান্না শেষে সহজেই পাত্রটি পরিস্কার করা যাবে।
পশ্চিমে অনেক দেশে ক্যাম্পাররা এক পাত্রেই কাটাকাটি, রান্না, খাওয়ার সব কাজ করেন। তবে আমাদের দেশে এ ধরণের পাত্র পাওয়া কঠিন। তবে চেষ্টা করবেন মাল্টি-পারপাস পাত্র ও জিনিসপত্র যত বেশি সম্ভব ব্যবহার করতে। সব খাবার রান্না ও পরিবেশন করা যায় এমন একটিই চামচ নিন। এতে আপনার ব্যাগের ওজন কমে যাবে অনেকাংশে।
৩। প্যাকেট বা টিনজাত খাবার বেশি নিন

আজকাল দেশের সুপারশপগুলোতে প্যাকেত বা টিনের ক্যানের খাবার পাওয়া যায়, যেগুলো প্রক্রিয়াজাত করা থাকে। শুধু প্যাকেট থেকে বের করে রান্না করলেই হয়ে যায়। সম্ভব হলে এ ধরণের খাবার সঙ্গে নিয়ে নিতে পারেন। এতে ক্যাম্পিং-এ রান্নাবান্না করার ঝামেলা অনেকাংশেই কমে যাবে।
তবে আমাদের দেশে কিছু দুর্গম জায়গা ছাড়া বাকি সবখানেই কাছাকাছি স্থানীয় বাজার থাকে, সেখান থেকেও চাইলে রান্নার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নিতে পারেন। এতে আপনার ব্যাগের উপর চাপ অনেকাংশে কমে যাবে।
৪। জিপলক, আইস ব্যাগ ও এলুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার করুন

রান্না করার জন্য যত উপকরণ প্রয়োজন, সবগুলো আলাদা আলাদা জিপলক ব্যাগে নিয়ে নিন। এতে উপকরণগুলো ভালো থাকবে। পচনশীল দ্রব্যের জন্য সম্ভব হলে একটি আইসব্যাগ/বক্স ব্যবহার করতে পারেন।
রান্না করা খাবার অনেকক্ষণ গরম ও তাজা রাখতে এলুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এলুমিনিয়াম ফয়েল কিছু ক্ষেত্রে রান্নার পাত্র হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
৫। কাটাকাটির কাজ আগেই করে নিন
যে কয়দিনের জন্য ক্যাম্পিং করবেন সে অনুযায়ী মাংস, মাছ, সবজি, মশলাপাতি এসব উপকরণ আগেই কেটে জিপলক ব্যাগে ঢুকিয়ে নিতে পারেন। এতে ক্যাম্প সাইটে গিয়ে কাটাকাটির ঝামেলা অনেকখানি কমে যাবে। তবে সঙ্গে একটি কাটিং বোর্ড ও একটি চাকু নিতে ভুলবেন না। এতে ক্যাম্পিং-এ রান্নাবান্না অনেক সহজ হয়ে যাবে।
৬। পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখুন
পানি ছাড়া কোন কিছুই চলে না। তাই পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির স্টক নিশ্চিত করে নিন। সম্ভব হলে ঝর্না, ঝিরি বা মিষ্টি পানির উৎসের কাছে ক্যাম্প করুন, এতে পানি বহনের বাড়তি কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন। সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সঙ্গে রাখুন। ট্যাবলেট না থাকলে পানি ফুটিয়ে পান করুন।
৭। রান্না ও খাবারের আবর্জনা আলাদা রাখুন
রান্না ও খাবারের আবর্জনা রাখার জন্য একটি আলাদা কালো পলিব্যাগ ব্যবহার করুন। এতে শুধু পচনশীল আবর্জনা রাখুন। ক্যাম্পিং শেষে সেগুলো নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিন।
৮। রান্নার বিকল্প ব্যবস্থা রাখুন
যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সমস্যার কারণে আপনার রান্না করার সুযোগ নাও হয়ে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে তো না খেয়ে থাকতে পারবেন না! তাই রান্নার ব্যবস্থার পাশাপাশি সাথে বিস্কুট, চিড়া-মুড়ি, গুঁড়সহ শুকনো খাবারও রাখুন পর্যাপ্ত।
লেখাঃ জোবায়ের রায়হান
আরও দেখুনঃ কেমন তাঁবু কিনবেন?