বিছনাকান্দি থেকে পান্তুমাই ট্রেকিং

bichnakandi-pantumai-tracking-wonderful-bangladesh

যারা নতুন করে ট্র্যাকিং শুরু করতে চাইছেন কিংবা যারা স্বল্প দূরতের তুলনামূলক সহজ ট্র্যাকিং করতে চান, তাদের জন্য বিছনাকান্দি থেকে পান্তুমাই ট্র্যাকিং হতে পারে আদর্শ। বামে ভারতের পাহাড়ের সারি, ডানে বিস্তৃত ভ্যালির মাঝে দিয়ে অপূর্ব সুন্দর এই ট্র্যাকটি বাংলাদেশের ট্র্যাকারদের কাছে কিছুটা অপরিচিত।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ের নিচে, একেবারে সীমান্ত ঘেঁষে বয়ে চলে উঁচু-নিচু টিলা আর মেঠোপথের এই ট্র্যাক থেকে দেখতে পাবেন মেঘালয় রাজ্যের সারি সারি পাহাড়, ঝর্না, ঝর্না থেকে বয়ে আসা পানির স্রোতধারা, আর দিগন্ত বিস্তৃত চারণভুমি।

প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ট্র্যাকটি বিছানাকান্দি-ময়নাকান্দি-লক্ষণছড়া-বিজিবি ক্যাম্প-পিয়াইন নদী পার হয়ে পান্তুমাই ঝর্ণার কাছে গিয়ে শেষ হয়েছে। তবে চাইলে এই ট্র্যাকটি ব্যবহার করে জাফলং পর্যন্তও যাওয়া যায়। খুব বেশি চড়াই-উতরাই নেই বলে নবীন ও স্বল্প দূরত্বের ট্র্যাকারদের জন্য এই রুটটি আদর্শ হতে পারে।

bichnakandi-pantumai-traking-wonderful-bangladesh-3
পথে পড়বে হাঁটুপানির পিয়াইন নদী

বিছনাকান্দি থেকে পান্তুমাই যেতে সময় লাগবে প্রায় ৫ ঘণ্টা। পান্তুমাই গেলে চোখে পড়বে ভারত সীমান্তে অবস্থিত পান্তুমাই ঝর্না। বাংলাদেশ পাড় থেকেই উপভোগ করতে হবে এই অপূর্ব ঝর্নাটি। স্থানীয়রা ঝরনাটিকে ফাটাছড়ির ঝরনা বা বড়হিল ঝরনাও বলেন। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই পাঁচ মাস এই পথে ট্র্যাকিং করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

কিভাবে যাবেন
bichnakandi-pantumai-traking
বিছনাকান্দি থেকে পান্তুমাই ট্র্যাকিং ম্যাপ, সোর্সঃ গুগল ম্যাপ

বর্ষাকালে ভ্রমণের জন্য এই ট্র্যাকটি তেমন উপযুক্ত নয়, তাই চেষ্টা করুন অক্টোবর থেকে মার্চের মধ্যে এই ট্র্যাকে ঘুরতে যেতে। সিলেট শহরের আম্বারখান থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা নিয়ে চলে যাবেন হাদারপাড় বাজারে। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১৮০ টাকা।

সেখান থেকে বর্ষা কালে নৌকা নিয়ে, আর শুকনা মৌসুমে হেঁটেই চলে যেতে পারবেন বিছনাকান্দিতে।

বিছানাকান্দি থেকে পুর্ব দিকের গ্রামীণ সড়ক ধরে যাত্রা শুরু করবেন। এই ট্র্যাকটি পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে একমুখী। তাই মোটামুটি পূর্বদিকেই এগোতে হবে। সকাল সকাল সিলেট থেকে যাত্রা শুরু করলে বিছনাকান্দি ঘুরে ফিরে ট্র্যাকিং শুরু করতে পারেন। সকাল ৮টার দিকে ট্র্যাকিং শুরু করলে দুপুরের আগেই পান্তুমাই পৌঁছে যাবেন।

পান্তুমাই থেকে পিয়াইন নদী পার হয়ে টেম্পু/সিএনজি অটোরিকশায় সরাসরি জাফলং বা গোয়াইনঘাট চলে যেতে পারবেন।  

কোথায় থাকবেন

ট্র্যাকিং শেষে যদি ক্যাম্পিং করতে চান, তাহলে সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হচ্ছে পান্তুমাই ঝর্ণার কাছেই বাংলাদেশ সীমান্তে পিয়াইন নদীর পাড়। এখানে অনেকেই ক্যাম্পিং করেন। তবে যদি দিনে দিনে ফিরে আসতে চান তাহলে জাফলং বা সিলেট শহরে রাত যাপন করতে পারেন।  

কেমন খরচ

যদি ক্যাম্পিং না করতে চান, তাহলে সিলেট থেকে সকালে যাত্রা করে ট্র্যাকিং শেষ করে আবার দিনে দিনেই সিলেটে ফিরে আসতে পারবেন। সেক্ষেত্রে গাড়ি ভাড়া ও দুপুরের খাবারসহ ৩০০-৪০০ টাকা খরচ হবে। আর দলবেঁধে ক্যাম্পিং করলে খরচ আরও কম হবে।

পরামর্শ

ট্র্যাকিং করতে গেলে অবশ্যই জিপিএস/ম্যাপ সঙ্গে রাখবেন। ওই এলাকায় ফোনের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়, তাই সহজেই গুগল ম্যাপের সহায়তা নিতে পারবেন। তাছাড়া এই ট্র্যাকটি স্থানীয় লোকজন ব্যবহার করে, তাদের জিজ্ঞেস করেও এগোতে পারবেন। গরমের দিনে সঙ্গে হ্যাট/ক্যাপ নিতে পারেন।

যেহেতু ট্র্যাকটি ভারতীয় সীমান্তে (কখনো কখনো ভারতের ভেতর দিয়েও আপনাকে হাঁটতে হবে), তাই অত্যন্ত সতর্ক থাকুন। ভালো হয় স্থানীয় কাউকে নিজেদের সঙ্গে নিয়ে নিন। বিজিবি ক্যাম্পে নিজেদের পরিচয় দিয়ে রাখুন।

আরও দেখুনঃ টাঙ্গুয়ার হাওরে ২ দিনের নৌকা ভ্রমণ